দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা দূর করার উপায়
পৃথিবীতে প্রায় অধিকাংশ মানুষই দাঁতের সমস্যায় ভুগে থাকে যেমন দাঁতের শিরশিরানি
ব্যথা। আর এই দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা দূর করতে আমরা ডাক্তারি পরামর্শ ছাড়াও অনেক
ঘরোয়া উপায় ও ব্যবহার করে থাকি। তবুও কিছুদিন পরপরই দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা
আবারো জেগে ওঠে।
তাই আজ আপনাদের সাথে আলোচনা করবো দাঁতের শিরশিরানি ব্যথার পার্মানেন্ট সল্যুশন
নিয়ে। আজকের আর্টিকেল টি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা
ভূমিকা
দাঁত মেরুদন্ডী প্রাণীর শরীরে অবস্থিত একটি অঙ্গ। মানবদেহে দাঁতের গুরুত্বতা
অপরিসীম। দাঁত খাদ্য চর্বন ও কর্তনের কাজে ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ প্রাণীর দেহে
দাঁতই হচ্ছে কঠিনতম অঙ্গ। তাই দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা বা দাঁতের মাড়িতে ব্যথা
মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে দেয়। তাই আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি দাঁতের শিরশিরানি
দূর করার পেস্ট বা দাঁতের শিরাশিরানি দূর করার ঔষধ তৈরি করা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা
করে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও পেস্ট তৈরি করেছেন।
এমনকি দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার নিয়েও নানা গবেষণা করে থাকে বিভিন্ন
দন্ত চিকিৎসক গণ। দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা বা দাঁতে ক্ষত হওয়া এগুলোর কারণ ও
প্রতিকার সম্বন্ধে বিভিন্ন অনুসন্ধান করে এর সমাধান বের করে থাকেন চিকিৎসকগণ।
শুধু তাই নয় দাঁতের শিরশিরানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় সম্পর্কেও বহু মতালোচনা
করে থাকেন চিকিৎসকগণ এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন সমাধান দিয়ে থাকেন। আজ এ সমস্ত বিষয়
নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা
মানব দন্তের কাজ হলো খাদ্য বা খাদ্য কণা কে কেটে অথবা চূর্ণ করে চরবোনের মাধ্যমে
হজম বা গিলে ফেলার উপযুক্ত করা। মানবদেহে ৫ ধরনের দাঁত রয়েছে। যেমন: কর্তন দাঁত,
ছেদন দাঁত, অগ্রপেষন দাঁত, পেষন দাঁত, আক্কেল দাঁত। প্রত্যেক ধরনের দাঁতের
নির্দিষ্ট কিছু কার্য প্রক্রিয়া রয়েছে। তাই দাঁতে বা দাঁতের মাড়িতে যদি কোন
সমস্যা হয় তাহলে প্রত্যেকটি মানুষকে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
দাঁত শিরশির করা কিংবা ব্যথা হোক দাঁতের যন্ত্রণা সহ্য করা খুবই কঠিন। আর এই কঠিন
সমস্যার শুরু হয় অতিরিক্ত ঠান্ডা খাবার বা টক বা অতিরিক্ত গরম খাবার থেকে। এ
ধরনের খাবার গুলি খেলে দাঁতের মধ্যে এক প্রকারের শিহরণ সৃষ্টি হয়। দাঁতে এনামেল
নামক একপ্রকার উপাদান থাকে। এই এনামেল নামক উপাদান ক্ষয় হয়ে গেলে সাধারণত
দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা শুরু হয়। দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা কে অবহেলা করা মোটেই
উচিত নয়।
আরো পড়ুন:মুখে শসা ব্যবহারের নিয়ম
রোজ অন্তত দুইবার হালকা গরম পানিতে নুন দিয়ে গর্গল বা কুলকুচি করলে দাঁতের
শিরশিরানি ব্যথা থেকে আরাম মিলতে পারে। এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানির মধ্যে এক চামচ
লবণ মিশিয়ে অন্তত ৩০ সেকেন্ড করে পানি মুখে রাখতে হবে। আবার এক টেবিল চামচ হলুদ
আধা চামচ সরিষার তেল ও আধা চামচ লবণ একসাথে মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দাঁতে লাগালে
আপনার দাঁতের শিরশিরানি কম করে ব্যথা ভালো করতে পারে।
দাঁতের শিরশিরানি দূর করার পেস্ট
ঠান্ডা পানি, গরম পানি, আইসক্রিম বা টক জাতীয় কোন খাবার মুখে নিলে যদি আপনার
দাঁত শির শির করে তাহলে কোন টুথপেস্টটি আপনি ব্যবহার করবেন। এ বিষয়ে অনেক সময়
আমরা চিন্তিত থাকি। কারণ দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা জীবনকে অতিষ্ঠ করে ফেলে। অবশ্যই
আপনাকে দাঁতের শিরশিরানি দূর করার পেস্ট ব্যবহার করতে হবে আপনার রেগুলার টুথপেস্ট
এর পরিবর্তে। তবে বলা বাহুল্য, যে আপনার রেগুলার টুথপেস্ট এবং দাঁতের শিরশিরানি
দূর করার পেস্ট এর মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে।
তাই দাঁতের শিরশিরানি ব্যথাকে দূর করতে বাজারে কিছু ভালো টুথপেস্ট পাওয়া যায়
যেগুলো ব্যবহার করতে ডাক্তাররাও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা দূর
করতে যেসব পেস্ট আপনি ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
- দাঁতের শিরশিরানি দূর করার পেস্ট গুলোর মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম হচ্ছে রেপিড রিলিফ এর সেনসোডাইন টুথপেস্ট। সেনসোডাইন টুথপেস্ট এর মধ্যে মূল উপাদান হিসেবে স্টোনাস ফ্লোরাইন ও সোডিয়াম ক্লোরাইড রয়েছে। এই দুইটি উপাদান দাঁতের ডেন্টিনের উপরে একটি আস্তরণ তৈরি করে এবং দাঁতের শিরশিরানি কম করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- দাঁতের শিরশিরানি দূর করার পেস্ট গুলোর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পেস্ট হচ্ছে সেনসোডাইন রিপায়ার এন্ড প্রটেক্ট টুথপেস্ট। যেটি লং টাইম সেনসিটিভিটির ক্ষেত্রে খুবই উপযোগী যার মধ্যে মূল উপাদান হিসেবে ক্যালসিয়াম সোডিয়াম ও ফসফোসিলিকেট সডিয়াম থাকে। এ দুইটি উপাদান কিন্তু দাঁতের ডেন্টিনের ওপর একটি আস্তরণ তৈরি করে এবং দাঁতের শিরাশরানি ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।
- দাঁতের শিরশিরানি দূর করার পেস্ট গুলোর মধ্যে আরেকটি অন্যতম টুথপেস্ট হচ্ছে সেনসোডাইন কে প্লাস টুথপেস্ট। যার মধ্যে মূল উপাদান হিসেবে রয়েছে পটাশিয়াম নাইট্রেট। যা দাঁতের শিরশিরানি দূর করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
- দাঁতের শিরশিরানি দূর করার জন্য রয়েছে বিশেষ ধরনের মাজন। দাঁতের এই সমস্যা নিরসনে এক ধরনের বিশেষ দাঁতের মাজন পাওয়া যায় একে ডিসেনসিটাইজিং টুথপেস্ট বলে। এই ধরনের মাজনে কিছু বিশেষ উপাদান থাকে যা উন্মুক্ত স্নায়ু মুখগুলি ঢাকতে সহায়তা করে। পটাশিয়াম নাইট্রেট নামক একটি যৌগ এই কাজে অত্যন্ত উপযোগী।
দাঁতের শিরশিরানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
যদি ঠান্ডা বা গরম কিছু খেলে আপনার দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা শুরু হয় তাহলে বুঝতে
হবে আপনার দাঁতের সেন্সিটিভিটি আছে। দাঁতে যদি ক্যাভিটি বা গর্ত থাকে দাঁত ক্ষয়
বা ভাঙ্গা দাঁত, প্রদাহ, এনামেল ক্ষয় বা দাঁতের শিকড় যদি বেরিয়ে আসে তাহলে এমন
হতে পারে। এমন হলে আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে প্রশ্ন করে থাকি দাঁতের
শিরশিরানি থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায় কি। একটি স্বাভাবিক দাঁতের ক্রাউনের উপরের
অংশে এনামেল থাকে। আর রুটের উপরের অংশ দিয়ে আবৃত থাকে। ডেন্টিনের ঘনত্ব এনামেল ও
সিমেন্টামের তুলনায় একটু কম হয়।
এর মধ্যে ডেন্টিনাল টিউবেল্স নামক অসংখ্য টিউব থাকে যা দাঁতের মজ্জা পর্যন্ত
সংযুক্ত থাকে। যদি কোন কারণে এনামেল বা সিমেন্টম ক্ষয় হয়ে যায় ঠান্ডা বা গরম
কিছু খেল শিরশিরানি অনুভূত হয় একেই বলে হাইপার সেনসিটিভিটি। হাইপার সেনসিটিভিটি
চিকিৎসার আগে আমাদের দেখতে হবে সেনসিটিভিটির কারণ কি এবং দাঁতের শিরশিরানি থেকে
মুক্তির ঘরোয়া উপায়। নিচে কিছু ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো:
- ডিসেনসিটাইজেশন টুথপেস্ট: বাজারে বেশ কিছু টুথপেস্ট এর মধ্যে এমন কিছু টুথপেস্ট পাওয়া যায় যেগুলোর মধ্যে পটাশিয়াম নাইট্রেট উপাদানটি যুক্ত করা থাকে। এই পটাশিয়াম নাইট্রেট উপাদানটি ডেন্টিনের টিউবয়েল এর ওপরে লাগিয়ে রাখলে ডেন্টিনের মুখ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। এতে শিরশির অনুভূতি আর হয় না।
- ফ্লুরোইট জেল: ডেন্টিনাল টিউবয়েলের ওপর একটু ঠান্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে। যে কারণে সেনসিটিভিটি ট্রান্সমেট করতে পারে না।
দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার
পৃথিবীতে যত ধরনের অসুস্থতা বা সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে অস্বস্তিকর
সমস্যা হচ্ছে দাঁতের সমস্যা। দাঁতের সমস্যা হয় না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই
আছে। দাঁতের সমস্যা হলে দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন
ডেন্টালে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিয়ে নিজের দাঁতের সুরক্ষায় চিকিৎসা করতে হবে।
এমনকি দাঁত শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে আমরা ইন্টারনেট থেকেও বিভিন্ন
তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। কিন্তু আপনি জানেন কি দাঁত শির শির করার কারণ কি? দাঁত
শিরশির করার কারণ ও প্রতিকার সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:
আরো পড়ুন: সিলেট জেলার উপজেলা সমূহের নাম
- দাঁতের এনামেল ক্ষয় হলেও কিছু কিছু সময় দাঁত শিরশির করতে পারে।
- শক্ত ব্রাশ ব্যবহার করলেও দাঁতের ক্ষতি হতে পারে। তাই সস্তা ও শক্ত ব্রাশ ব্যবহার না করাই ভালো।
- বেশি জোরে এলোমেলো ভাবে ব্রাশ করা উচিত নয়। একটু ধীরে মার্জিতভাবে ব্রাশ করতে হবে এবং খুব বেশি সময় ধরে ব্রাশ করা যাবে না।
- বয়স জনিত কারণেও দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে। তাই দাঁতের সুরক্ষায় নিয়মিত ডাক্তারি পরামর্শ নিন।
- অনেক সময় টুথপেস্ট এর কারণেও দাঁতের সমস্যা হতে পারে। তাই ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী টুথপেস্ট ব্যবহার করুন।
- যেগুলো খাবার খেলে দাঁতে শিরশির অনুভূতি হয় সে খাবারগুলো থেকে বিরত থাকো।
শেষ কথা
আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল দাঁতের শিরশিরানি ব্যথা হয় কেন ও এর
ঘরোয়া উপায় কি এবং এর কারণ ও প্রতিকার কি এ সম্বন্ধে। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি
আপনার অনেক ভালো লেগেছে। আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন আপনার
মূল্যবান মতামত অবশ্য শেয়ার করুন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল
প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার
জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 26181
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url