যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
আপনি কি যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা তৈরি করতে চান। আপনি যদি
ভেবে থাকেন যে যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান
অর্জন করবেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শুধুমাত্র আপনার জন্য। কারণ আজকের আর্টিকেলটি
পড়ে আপনি যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন
করতে পারবেন।
তাহলে চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
সমূহ। আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্র: যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
ভূমিকা
১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ পাই। যশোর জেলার পূর্ব
নাম ছিল খিলাফতাবাদ। ফারসি শব্দ যশর থেকে যশোর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকেই
ধারণা করেন। ফারসি শব্দ যশর অর্থ ব্রীজ বা সাঁকো। এক সময় ছিল যখন আপনি যে স্থান
থেকেই যশোরে আসতে চান না কেন আপনাকে অনেক নদী, নালা, খাল, বিল পার হয়ে যশোরে
প্রবেশ করতে হত। আর সে সমস্ত নদী, নালা, খাল, বিলের ওপর তৈরি করা থাকতো অসংখ্য
ব্রীজ বা সাঁকো। সেজন্য এই জেলার নামকরণ করা হয় যশর। যশোর একটি এমন জেলা যা বহু
ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পথিক হিসেবে শুধু বাংলাদেশী নয় সমগ্র বিশ্বে সুপরিচিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের আলোচনা করতে গেলে যশোর জেলার
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মনে পড়ে যায়। তেমনি যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
ও যশোর জেলার বিখ্যাত খাবার কি কি বা যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এ বিষয়ে
মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। কারণ যশোর জেলাতেও এমন অনেক ঐতিহাসিক ও স্মৃতি পূর্ণ
জায়গা রয়েছে যেগুলো জায়গা পরিদর্শন করার আগ্রহ আমাদের অনেকের মধ্যেই বিদ্যমান।
শুধু দেশেই নয় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর যশোরে বহু দর্শনার্থীরা
বেড়াতে আসে।
যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নাম
বাংলাদেশের যতগুলি জেলা রয়েছে প্রত্যেকটি জেলায় নির্দিষ্ট কিছু ঐতিহ্য বা
ইতিহাস রয়েছে। প্রতিটি জেলাকেই নিজস্ব খাবার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ ও কিছু
বৈচিত্র্যময় দর্শনীয় স্থানের জন্য সে স্থানকে পৃথিবীর একটি অন্যতম স্থানে
জায়গা করে দেয়। তার মধ্যে যশোর জেলা কোন অংশে কম নয়। যশোর জেলার বিখ্যাত
ব্যক্তিবর্গের নামের জন্য বা যশোর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেকেরই
জানা আছে আবার অনেকেই এমন রয়েছে যারা অজানা। তাই আজ যশোর জেলার বিখ্যাত
ব্যক্তিবর্গের নাম সমূহ এবং তারা কি কি কর্মকাণ্ডের জন্য বিখ্যাত হয়েছে সে
সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
আরো পড়ুন: বজ্রপাত নিয়ে ক্যাপশন - বজ্রপাত নিয়ে কবিতা
- মাইকেল মধুসূদন দত্ত: যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকায় সবচেয়ে প্রথমে যার নাম রয়েছে সে হচ্ছে মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্ম গ্রহণ করেন ব্রিটিশ ভারত অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত জন্মগ্রহণ করেন ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতা ব্রিটিশ ভারতে। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছন্দ নাম ছিলেন টিমোথি পেনপোয়েম। পেশাগত জীবনে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একজন কবি ও নাট্যকার।
- ফারজানা রিক্তা: ফারজানা রিক্তা হলেন একজন বাংলাদেশী মডেল অভিনেত্রী এবং উপস্থাপিকা। যিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে থাকেন। ফারজানা রিক্তা যশোর জেলার নজরুল ইসলাম ও মাহফুজা ইসলামের একমাত্র সন্তান। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
- হামিদা রহমান: যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকায় হামিদা রহমান নাম অন্যতম। তিনি যশোর জেলার একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিক ছিলেন। তিনি যশোরের পুরাতন কসবায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি যশোর জেলার একমাত্র নারী ভাষা সৈনিক ও বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য ছিলেন। ভাষা আন্দোলন ও নারীর অধিকার নিয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের একাধিক পত্রিকায় তার বহু লেখা প্রকাশ পায়।
- হাজারীলাল তরফদার: হাজারীলাল তরফদার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন। হাজারীলাল তরফদারের জন্ম যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রানীআলী গ্রামে। তার বাবার নাম রসিকলাল তরফদার এবং মায়ের নাম শৈলবালা তরফদার।
- রশিদ আলী: রশিদ আলী ছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করেন।। রশিদ আলীর জন্ম অজানা থাকলেও তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রশিদ আলী কর্মরত ছিলেন যশোরের ইপিআর সেক্টর হেডকোয়ার্টারের ৪ নং উইংয়ে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি তার ইউনিটের সাথে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে যুদ্ধ করেন যশোরের বেনাপোল এলাকায়। রশিদ আলীর বাবার নাম ছিলেন মনসুর আলী এবং মায়ের নাম ছিলেন করিমুন নেছা।
- মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি সাহিত্যিক ও ভাষাবিজ্ঞানী। মনিরুজ্জামান ১৯৩৬ সালে ১৫ ই আগস্ট যশোর জেলার খড়কী পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। মনিরুজ্জামান এর পিতার নাম মোঃ শাহাদাত আলী এবং মায়ের নাম রাহেলা খাতুন। মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান। তিনি বাংলা একাডেমীর কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যও ছিলেন।
- কর্মবীর মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ: মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ছিলেন একজন ব্রিটিশ ভারতের বাঙালি ইসলাম প্রচারক, তুলনামূলক ধর্মতাত্ত্বিক ও ব্যবসায়ী। মেহেরুল্লাহ ১৮৬১ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোরের ছাতিয়ানতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০৭ সালে ৭ মে ৪৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ যশোর শহরে সামান্য দর্জি গিরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার আনুষ্ঠানিক ভাবে লেখাপড়া কতটুকু ছিল সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি তবে তার লেখা প্রত্যেকটি বই এতটাই পাণ্ডিত্যপূর্ণ ও সুলিখিত যে বিজ্ঞ পাঠকমাত্রকেই তা অভিভূত করে ফেলতো।
- রায় বাহাদুর যাদুনাথ মজুমদার: যাদুনাথ মজুমদার একজন বাঙালি সম্পাদক, আইনজীবী ও সাহিত্যিক ছিলেন। যাদুনাথ মজুমদার ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ২৩ অক্টোবর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত লোহাগড়া নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যুবরণ করেন ১৯৩২ সালের ২৪ অক্টোবর। তার পিতার নাম প্রসন্নকুমার মজুমদার যশোরের দেওয়ানী আদালতে কর্মরত ছিলেন।
- প্রফেসর শরীফ হোসেন: প্রফেসর শরীফ হোসেন ছিলেন একজন বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও সমাজকর্মী। তিনি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভূষিত হন। শরীফ হোসেন ১৯৩৪ সালের ১লা জানুয়ারি যশোর জেলার খরকি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার পিতার নাম শফিউদ্দীন আহমেদ এবং মাতার নাম মেহেরুন্নেছা খাতুন।
- বেগম আয়েশা সরদার: বেগম আয়েশা সরদার ছিলেন একজন সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ। আয়েশা সরদার ১৯২৭ সালের যশোর জেলার বাঘারপাড়া থানার খানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৮৮ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার পিতার নাম ছিল সুবরাত আলী সরদার। বেগম আয়েশা সরদার ১৯৫৪ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন মুসলিম লীগ মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান। বেগম আয়েশা সর্দার ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিয়োজিত ছিলেন। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করে তিনি বিএ ডিগ্রী লাভ করেন।
যশোর জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
বাংলাদেশের যতগুলো সমৃদ্ধশালী জেলা রয়েছে তার মধ্যে যশোর একটি। যশোর জেলা প্রায়
অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত। যেমন: যশোর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামের তালিকা
করতে গেলে যশোর জেলাকে বিখ্যাত বলে আখ্যায়িত করে যেতে পারে। আবার যশোর জেলার
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও কোন অংশে কম নয়।
৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে দুজনই বৃহত্তর যশোর জেলার কৃতি সন্তান। এটি যশোর জেলার
জন্য পরম সৌভাগ্যের বিষয়। স্বাধীনতা যুদ্ধে যশোরের রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস। যশোরে
প্রথম শহীদ হন চারুবালা, জননেতা শহীদ মশিউর রহমান, এ্যাডভোকেট শ্রী সুনীর কুমার
রায়, ব্যবসায়ী নারায়ণচন্দ্র সাহা ও সমাজসেবী সুধীর কুমার ঘোষসহ অনেকে।
যশোর জেলার বিখ্যাত খাবার কি
আমাদের মনে অনেক সময় এমন ইচ্ছা আসে যে বিভিন্ন জায়গার বা বিভিন্ন ঐতিহাসিক
স্থানের বিখ্যাত খাবার কি সে সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা। কারণ যে সকল জেলাগুলোতে
বেড়াতে যাওয়ার সুনিদর্শন স্থান রয়েছে সেই স্থানগুলোতে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছা
অনেক ভ্রমণপ্রেমীদেরই রয়েছে। যেমন: আপনার মনে যদি এমন ইচ্ছা হয় যে আপনি যশোরের
ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে বেড়াতে যাবেন তাহলে সর্বপ্রথম আপনার মাথায় যে খেয়ালটা
আসবে সেটা হচ্ছে যশোর জেলার বিখ্যাত খাবার কি কি।
যশোর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে কাঁঠালের বিচি কুকড়ো মাংস। শীতের মৌসুমে বিশেষ
পদ্ধতিতে সংরক্ষিত কাঁঠালের বিচি দিয়ে কুকড়োর মাংস রান্না হয় আর খাওয়া হয়
ছিটে রুটি দিয়ে। এটি জামাই আদরের অন্যতম খাবার। আবার যশোরের জামতলার মিষ্টি শুধু
বাংলাদেশেই নয় সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। এটি ছানা দিয়ে তৈরি গোলাকৃতির একটি
মিষ্টি। যা ঘন চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয়। এটি দেখতে কিছুটা লালচে ও বাদামী
রংয়ের হয়।
শেষ কথা
উপরিউক্ত আর্টিকেলে আজ আপনাদের সাথে আলোচনার মূল বিষয় ছিল যশোর জেলার বিখ্যাত
ব্যক্তিবর্গের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করা। সাথে আরো আলোচনা করেছি
যশোর জেলার বিখ্যাত খাবার কি কি ও যশোর জেলার মুক্তিযুদ্ধদের সম্বন্ধে। আজকের
আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কতটুকু উপকৃত হয়েছেন আপনার মূল্যবান মতামত অবশ্যই শেয়ার
করবেন। এমনই গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় আর্টিকেল প্রতিদিন পেতে নিয়মিত আমাদের
ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 26181
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url